পুলিশি হেফাজতে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি মৃত্যুর মামলায় উচ্চ আদালতে আপিল করতে ক্ষতিপূণের ২ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়া উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ। আজ বুধবার রায় প্রদানকারী আদালত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ আসামির পরিবার টাকা জমা দেয়ার আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত অনুমতি দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে তারা ওই টাকা জমা দিয়েছেন। যা ওই আসামির আইনজীবী ফারুক আহমেদ নিশিচত করেছেন। এ আইনজীবী জানান, রায় নিহতের পরিবারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ৩ আসামিকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। যা আজ বুধবার এসআই জাহিদের পক্ষে জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর একই আদালত এ মামলায় এসআই জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্যে আইনের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয়। রায়ে দণ্ডিত ৩ পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে রাষ্ট্রের অনুকূলেও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করেন আদালত। যা না দিলে তাদের আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আশে দেওয়া হয়। আর দণ্ডিত ২ সোর্সের কারাদণ্ডের পাশাপশি ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারক রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন। মামলাটিতে ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন আদালত। পরে হাইকোর্টে আসামিদের আবেদনে দীর্ঘদিন মামলাটি বিচার বন্ধ ছিল।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে মারার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট নিহতের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পল্লবী থানার ইরানি ক্যাম্পে বিল্লালের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। নিহত জনি, তার ভাই মামলার বাদী রকিসহ অন্যান্য সাক্ষীরা সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাত ২টার দিকে পুলিশের সোর্স এ মামলার ৭ নম্বর আসামি সুমন মদ খেয়ে স্টেজে উঠে মেয়েদের উত্যক্ত করছিলেন। জনি তাকে প্রথমে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার সুমন একই কাজ করলে সুমনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জনি সুমনকে থাপ্পর দিলে সে আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ ২৫/২৬ জন পুলিশ নিয়ে বিয়ে বাড়িতে এসে ভাঙচুর করে নিহত জনি, রকিসহ বেশ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর এসআই জাহিদসহ অপর আসামিরা তাদের পল্লবী থানা হাজতে হকিস্টিক ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে বেদম প্রহার করেন। জাহিদ জনির বুকের ওপর চড়ে লাফালাফি করেন। জনি এ সময় একটু পানি খেতে চাইলে জাহিদ তার মুখে থুথু ছুরে মারে। নির্যাতনে মামলার বাদী রকি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার বড় ভাই জনিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে মারামারির মিথ্যা কাহিনী দেখিয়ে জনি নিহত হয় বলে দেখানো হয়।
প্রসঙ্গত, ঝুট ব্যবসায়ী সুজনকে পুলিশ হেফাজতে একই ভাবে মৃত্যুর ঘটনার আরেক মামলায়ও আসামি এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ। ওই মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।