শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক সংকট এবং নৈরাজ্যের আবহে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দাবি উঠেছিল। গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর সেই দাবি জোরদার হয়। গতকাল বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে। এক মাস আগে তাকে দ্বীপদেশটির প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করায় রনিল অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এবার তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হলো।
বিজয়ী হয়ে প্রথম বক্তব্যে রনিল বলেছেন, সংকটে জর্জরতি শ্রীলংকায় বিভক্তির অবসান হয়েছে। আমাদের মধ্যে এখন আর কোনো বিভক্তি নেই। তবে নতুন প্রেসিডেন্ট বিভক্তি অবসানের কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। গণতান্ত্রিক উপায়ে পার্লামেন্টের ভোটে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও তাকে মানতে নারাজ কয়েক মাস ধরে রাস্তায় থাকা আন্দোলনকারীরা। আবারও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, রনিলকে জেতাতে রাজাপাকসে পরিবার হস্তক্ষেপ করেছে। আর এ কারণে দেশজুড়ে এত ক্ষোভ। তা ছাড়া যে প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে আন্দোলনকারীদের। সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগের পর থেকেই বিষয়টি বলে আসছিলেন তারা।
আল-জাজিরাকে বিক্ষোভকারীদের নেতা মেলানি গুনাথিলাকে বলেছেন, আমরা বর্তমানে আমাদের কৌশল ও পুনরায় সংগঠিত হওয়া নিয়ে আলোচনা করছি। রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত গোতাগোগামায় (বিক্ষোভস্থল) নিশ্চিতভাবে আমাদের সংগ্রাম এবং অবস্থান কর্মসূচি আমরা চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, আমরা ভালো করেই জানি, গোতাবায়া আর রনিল বিক্রমাসিংহে একই লোক নন। তিনি (বিক্রমাসিংহে) আরও ধূর্ত লোক। সম্প্রতি তিনি জরুরি অবস্থা জারি করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তিনি গোতাগোগামায় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি মনে করি না, এসবে মানুষ আর ভয় পাবে। গুনাথিলাকে বলেন, শ্রীলংকার এমন নেতা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, যিনি নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চেয়ে দেশের জনগণের বিষয়ে যত্নবান হবেন।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নিয়ম মেনেই রনিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো রনিল রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ। জনগণ এখন তাকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না। তিনি যদি শ্রীলংকার বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন, তা হলে হয়তো আগামী জাতীয় নির্বাচনে টিকে যেতে পারেন। তবে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। আন্দোলনকারীদের মূল লক্ষ্য হলো শ্রীলংকায় তৈরি হওয়া দুর্নীতিগ্রস্ত এলিট শ্রেণি। সেই জায়গায় রনিলকে তারা মেনে নেবে না। তারা আন্দোলনে যাবে রনিলের বিরুদ্ধে।