গার্মেন্টসে কি উড়াল দিয়া যামু?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত : শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১
  • ১৮৩ প্রিয় পাঠক,সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং মধুমতির সাথেই থাকুন

‘বাস বন্ধ, অটোরিকশা, সিএনজি, রিকশাও মাঝে মাঝে পুলিশ উল্টাইয়া রাখে, পাম ছাইরা দেয়। আপনেই কন, যামু কি উড়াল দিয়া? হের মধ্যে নৌকার লাইনে খাড়াই ভোর সাড়ে ৬টায়, ১ ঘণ্টা পর ট্রলার না পাইলে নৌকার ভাড়া দেই ১০ টাকা। আর ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা ভ্যানে, রিকশায় ডাবল ভাড়া দিয়া বিসিকের রাস্তায় পেক-পানি (কাদা-পানি) পারাইয়া গার্মেন্টসে ঢুকি ভূত হইয়া। আমাগো কতা কি কেউ ভাবে?’

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক পল্লীর গার্মেন্টকর্মী মরিয়মের এমন প্রশ্নের উত্তর কারও কাছেই নেই। কিন্তু এটাই এখন বাস্তব চিত্র শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জের। বিধিনিষেধ আর লকডাউনের কারণে এরকম বিপর্যস্ত এখানকার লাখ লাখ শ্রমিক।

মরিয়মের মতো আরও অসংখ্য শ্রমিক বন্দর থেকে বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজ করতে আসেন। কেউ কেউ কাজ করেন সিদ্ধিরগঞ্জের ইপিজেডে, কেউ আবার কাঁচপুরে। লকডাউনে বাড়তি যাতায়াতের খরচ নিয়ে একপ্রকার শঙ্কিত এই নির্দিষ্ট আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা।

মরিয়মের মতো বেশ কয়েকজন গার্মেন্টকর্মী জানালেন, প্রথম দিন (বিধি নিষেধের) টাকা খরচ কইরাই গার্মেন্টে আসছি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে বন্দর ঘাট থেকে পায়ে হাইটা আসা শুরু করছি। যাতায়াতেই যদি সব টাকা খরচ হয় তাইলে সংসার চালামু কী দিয়া? আমার সংসারের দায়িত্ব তো আর অন্যরা নিব না। কিন্তু সাঁত্রায়া (সাঁতার দিয়ে) তো নদী পার হইতে পারি না। তাই বাধ্য হইয়া ২ টাকার ট্রলার ভাড়া এখন ১০ টাকার নৌকা ভাড়া দিয়া পার হইতাছি। আর বিসিকের গেটের সামনের পচা পানি পাড়ায়াই কাজে যাই।

মাসদাইরের খানকা এলাকা থেকে বিসিকে কাজ করতে আসেন আলিয়া বেগম। বাসা থেকে হেঁটে বিসিকে ৩নং গেটের সামনের পানি মাড়িয়েই প্রতিদিন কাজে যেতেন। প্রায় ১৫ দিন থেকে তার বাড়িতেও পানি। এখন সেই পানিও হেঁটে পার হতে হয় তাকে। বিসিকের ওই নোংরা পানির কারণে পায়ে ঘা আরও আগে থেকেই ছিল। এখন সেই ঘা আরও বড় হয়েছে। তার পা ২৪ ঘণ্টা ভয়ানকভাবে চুলকায়।

আলিয়া বেগম বলেন, এখানে পানি, বাড়িতে পানি। কোনো জায়গাতেই শান্তি নাই। পায়ে ঘা হইছে। প্রতি মাসেই ওষুধ খাই, মলম লাগাই তাও সারে না। ঘা নিয়া কাজ করলে তো খাওন পাইতাছি। কাজ ছাড়লে তো খাওনও পামু না।

ফতুল্লার ইসদাইর এলাকার মো. মিলন বিসিকের ৩নং গলিতে পানির কারণে পঞ্চবটি দিয়ে ঘুরে ১নং গলি দিয়ে বিসিকে ঢোকেন। কিন্ত মাসদাইর থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত আগে ভাড়া দিতে হতো ১০ টাকা। লকডাউনের পর দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে নোংরা পানি মাড়িয়ে কাজে যান তিনি।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জসহ ৭ জেলায় গত ২২ জুন ভোর ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। ২১ জুন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কোভিডের বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ বাস্তবায়ন করতে জরুরি সভায় লকডাউন সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। সভায় জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সচিব) সত্যজিত কর্মকার।

গার্মেন্টসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অঞ্চল। দেশে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। এজন্য আমরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্মকাণ্ডগুলো অভ্যন্তরীণভাবে সীমিত পরিসরে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুভমেন্ট ছাড়া এসব শিল্প-কারখানা এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলো খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছি।

পোশাক শ্রমিকরা কীভাবে যাতায়াত করবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের কোনোরকম মুভমেন্ট করতে দিব না। আমরা অনুরোধ করেছি শ্রমিকদের কর্মস্থলে রেখে বা ওয়াকিং ডিস্টেন্সে বা শহরের কাছে রেখে কাজ করবে- সেই নির্দেশনা দিয়েছি।

জেলা প্রশাসকের এ নির্দেশনা কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান মানেনি। বিসিকের কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা বা অভ্যন্তরে থাকার কোনো ব্যবস্থা করেনি।

এ প্রসঙ্গে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গাড়ির ব্যবস্থা বা থাকার ব্যবস্থা কোনোটার কথাই আমরা শুনি নাই। আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলে নাই মালিকপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউন দিয়ে গার্মেন্ট খোলা রাখায় ভয়াবহ দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

তবে বিষয়টি নিয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর কোনো নেতাই কথা বলতে রাজি হননি।

Please Share This Post in Your Social Media

মধুমতি টেলিভিশনের অন্যান্য খবর